রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৪

গৌরীপুরে ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হারুণ দিবস কাল।। ৪৫ বছরে হারুনের পরিবারের খোঁজ নেয়নি কেউ

  1. কমল সরকার,গৌরীপুর  ।।
  2. আজ ২৭ জানুয়ারী ময়মনসিংহের গৌরীপুরে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হারুন দিবস। প্রতিবছর বিভিন্ অনুষ্ঠান মালায় দিবসটি উদযাপন করা হলেও শহীদ হারুনের রেখে যাওয়া পরিবার কেমন আছে তাদের খোঁজ-খবর কেউ রাখে না বা নেয় না। ঘটনার প্রত্যদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১দফা আন্দোলনের সময় ঢাকা নবকুমার ইনস্টিটিউট এর ছাত্র মতিউর রহমান পুলিশের গুলিতে শহীদ হলে সারা দেশে ছাত্র আন্দোলনের নতুন মাত্রা যোগ হয়। আর এই বিােভের জের ধরেই ২৭ জানুয়ারী সোমবার সকাল ১১ টায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর শহরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে তৎকালীন থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মোঃ ফজলুল হকের নেতৃত্বে গৌরীপুর কলেজ থেকে ছাত্ররা একটি বিশাল মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের মধ্যবাজার ধানমহালের কাছে আসা মাত্রই তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এম, এ সামাদের নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্রদের মিছিলের উপর আয়ুব শাহীর দাঙ্গা পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। ওই সময় পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন গৌরীপুর কলেজের বানিজ্য বিভাগের ২য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র আব্দুল আজিজ ওরফে হারুন। শহীদ আব্দুল আজিজ হারুনের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ছামারুল্লাহ্ গ্রামে। মৃত মিয়া বক্স সরকারের ছেলে শহীদ হারুনের ৬ ভাই, ৩ বোন। নান্দাইল-আঠারবাড়ি সড়কের পাশেই ৬৯’র গন আন্দেলনে শহীদ আব্দুল আজিজ হারুন চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন। তার জরাজীর্ণ কবরটি এলাকার লোকজনের সহায়তায় কিছু ইট দিয়ে বেষ্টনী করে রাখা হলেও এখন আর কেউ এর খোঁজ রাখে না। হারুনের ৬ ভাইয়ের মধ্যে জীবিত তিন ভাই, মোঃ আব্দুল হামিদ,আব্দুর রাশিদ ও শফিকুল আলম চাঁন মিয়া। মৃত্যুবরণ করেছেন, আব্দুল মাজিদ ও আব্দুল গনি নামের ২ ভাই। তিন বোনের মধ্যে আনোয়ারা খাতুন জীবিত ও অপর দুই বোন আমেনা খাতুন ও আছিয়া খাতুন মারা গেছেন। হারুনের ছোট ভাই শফিকুল আলম চাঁন মিয়া জানিয়েছেন, ওই সময়ে তিনি পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে গৌরীপুরে  গিয়ে জানতে পারে পুলিশ হারুনের লাশ অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে।  অবশেষে তিন দিন পর ময়মনসিংহ থেকে মুচিলেখা দিয়ে ভাইয়ের লাশ নান্দাইলে নিয়ে আসে এবং পুলিশী প্রহরায় দাফন করা হয়। হারুনের আরেক ভাই আব্দুর রাশিদ বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পরদিন ঢাকায় আসাদসহ আরো কয়েকজন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়। কিন্তু আসাদের মৃত্যুর ঘটনাটি জাতীয় ভাবে স্থান পেলেও আমার ভাইয়ের রেখে যাওয়া পরিবারের খোঁজ-খবর স্থানীয়ভাবেও কেউ নেয়নি। হারুনের কলেজ বন্ধু নান্দাইলের কূল ধূরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক মোঃ ইছহাক আকন্দ (৭৫) এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন,হারুন ও তিনি গৌরীপুর থানার ২ নং ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালিন চেয়ারম্যান মরহুম মোঃ গুঞ্জর আলীর সহায়তায় ইউনিয়ন পরিষদের একটি কে একসাথে থেকে গৌরীপুর কলেজে লেখা পড়া করতেন। ঘটনার দিন ২৭ জানুয়ারি পুলিশের দেওয়া ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ছাত্ররা যখন শহরে মিছিল বের করে তখন মিছিলের সামনে ছিল হারুন। ফলে অল্প কিছুনের মধ্যে হারুন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয় ।
  3. প্রতি বছর গৌরীপুরে ২৭ জানুয়ারী ”শহীদ হারুণ দিবস” বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়ে আসলেও হারুনের পরিবারের খবর কেউ রাখেনা । হারুণ যে স্থানে গুলিবিদ্ধ হয় সে স্থানটির পাশে ৪৩ বছর পর ২০১৩ সনে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট্ট একটি স্মৃতিফলক।  যেখানে তৎকালীন ধানমহালকে গৌরীপুর বাসী নাম রাখে শহীদ হারুন র্পাক। মুক্তিযুদ্ধের পর এখানে গড়ে উঠছে শহীদ মিনার ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্য্যালয়। বর্তমানে গৌরীপুর পৌর শহরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামজিক,ধর্মীয় সংগঠনের সভা-সমাবেশের একমাত্র কেন্দ্রস্থল হচ্ছে এ হারুন পার্ক। এ ছাড়া তার কবরটি নামকাওয়াস্থে শুধু ইটের গাঁথুনি দিয়ে কোনরকমে স্মৃতিটুকু ধরে রাখা হয়েছে। শহীদ হারুন দিবস উপলে আজ গৌরীপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, হারুণ স্মৃতি পরিষদ ও গৌরীপুর সরকারী কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যোগে দিনব্যাপী বিস্তারিত বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন